বাঁধ কেটে বন্যা আনা!

%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%2581%25E0%25A6%25A7%2B%25E0%25A6%2595%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%259F%25E0%25A7%2587%2B%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25A8%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25AF%25E0%25A6%25BE%2B%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%25A8%25E0%25A6%25BE

ঈদের মৌসুমে সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হয়ে গেল। বন্যাকবলিত অঞ্চলে রীতিমতো মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল, অনেকের বাড়িঘর পানির নিচে চলে গিয়েছিল। সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় ঈদ উদযাপন করেছে এসব এলাকার মানুষ। কয়েক লাখ মানুষ ঈদ কাটিয়েছে পানিবন্দি অবস্থায়। তাই দরিদ্র জনসাধারণের জন্য এবারের ঈদ উৎসব নয়, বরং উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কিন্তু এই যে লাখ লাখ মানুষ বন্যার জন্য দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে বাধ্য হলূ এর জন্য প্রকৃতিই শুধু দায়ী নয়, মানুষও অনেকাংশে দায়ী। বিস্ময়কর হলেও সত্য, এসব বন্যাকবলিত অঞ্চলেরই একদল মানুষ নদীতীরের বাঁধ কেটে দিয়ে স্বেচ্ছায় বন্যাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল নিজেদের এলাকায়। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলেই এসব অঞ্চলের মানুষের আশঙ্কা শুরু হয়ে যায়- কখন যে রাতের আঁধারে স্বার্থান্বেষীরা বাঁধ কেটে বন্যা নিয়ে আসে।
মূলত স্থানীয় ভূস্বামীরা নিজেদের জমিতে পলি মাটি নিয়ে আসার জন্যই নিজেদের লোকদের দিয়ে নদীর বাঁধ কাটানোর ব্যবস্থা করে। এর ফলে নদীর আশপাশ এলাকায় প্রচুর পলি মাটি প্রবেশ করে। এতে ভূস্বামীরা লাভবান হয় বটে, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় জনসাধারণ। বিশেষত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কষ্টের শেষ থাকে না, ঘরবাড়ি পানির নিচে চলে যায়, গবাদিপশু প্রতিপালনের মতো জায়গা অবশিষ্ট থাকে না, দিনমজুরদের কোনো কাজ থাকে না, তার ওপর নিরাপদ পানির অভাবে পানিবাহিত নানা রোগের প্রকোপ দেখা দেয়।
নদীর তীরবর্তী অঞ্চলগুলোয় এ সমস্যা অনেক দিনের। নদীতে পানি বাড়লেই একদল মানুষ বাঁধ কেটে দেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে। এরা সাধারণত হয়ে থাকে সমাজের প্রভাবশালী মানুষ। ফলে অনেক ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়ে যায়। আবার কোথাও কোথাও সাধারণ মানুষের বাধার মুখে বাঁধ কেটে দিতে ব্যর্থ হয়।
এ পরিস্থিতিতে এসব অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান প্রয়োজন। প্রয়োজনে নদীর তীরে স্লুইসগেট এবং নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খাল খনন করা যেতে পারে, যাতে করে যেসব কৃষি জমিতে পলি মাটি দরকার, সেসব জমিতে পলি মাটি পৌঁছানো যায়। সুপরিকল্পিতভাবে এ ব্যবস্থা নেয়া গেলে ভূস্বামীদের পাশাপাশি কৃষকরাও লাভবান হবে, আবার কেউ ক্ষতিগ্রস্তও হবে না। এছাড়া নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা দেখা দিলে প্রাশাসনিকভাবে এ বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে যেন অপরিকল্পিত বাঁধ কাটার ফলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যে কোনোভাবে এই অপরিকল্পিত বাঁধ কাটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ এর ফলে যে পরিমাণ পলিমাটি ও মাছ পাওয়া যায়, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ক্ষতি হয়ে যায়, এমনকি জীবনের শঙ্কাও দেখা দেয় অনেক সময়।
সিলেট অঞ্চলে বন্যার মৌসুম এখনও শেষ হয়ে যায়নি। তাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত এই মৌসুম থেকেই অপরিকল্পিত বাঁধ কাটার বিরুদ্ধে শক্ত ভূমিকা গ্রহণ করা দরকার। স্থানীয় প্রভাবশালীদের প্রশাসনিকভাবে বাঁধ কাটা থেকে বিরত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাঁধ কেটে বন্যা আনার অদূরদর্শী প্রথা বন্ধ করা দরকার। পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার মাধ্যমে এ মৌসুমে নদীতে যে অতিরিক্ত পানি আসে, সে পানি কীভাবে নদী তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষদের কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়েও জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত।

(৫ জুলাই, ২০১৮ তারিখের দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদকীয় পাতায়প্রকাশিত। ছবি: যুগান্তর থেকে সংগৃহীত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *