ইরানে অস্থিরতা কার স্বার্থে?

25E0 25A6 2587 25E0 25A6 25B0 25E0 25A6 25BE 25E0 25A6 25A8 25E0 25A7 2587 2B 25E0 25A6 2585 25E0 25A6 25B8 25E0 25A7 258D 25E0 25A6 25A5 25E0 25A6 25BF 25E0 25A6 25B0 25E0 25A6 25A4 25E0 25A6 25BE
ইরানে বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের শেষ সময়টা ইরানের ক্ষমতাসীনদের জন্য মোটেও ভালো ছিল না, কিংবা নতুন বছরের শুভ সূচনাও হয়নি তাদের জন্য। ২৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু গণবিক্ষোভ সামাল দিতে গিয়ে ক্ষমতাসীনদের বেসামাল অবস্থার কথা তো সবারই জানা। প্রাথমিকভাবে বেকারত্ব, দারিদ্র্য আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে শুরু হওয়া এই আন্দোলন খুব বেশি সময় স্বাভাবিক থাকেনি। আন্দোলনকারীদের একটি অংশ ধীরে ধীরে নানা রাজনৈতিক স্লোগান দিতে শুরু করে, যে দাবিগুলো নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর সে দেশের বড় ধরনের রাজনৈতিক আন্দোলনের কথা বললে সামনে চলে আসে ২০০৯ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভের কথা। কিন্তু রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ২০০৯ সালের বিক্ষোভের সঙ্গে এবারের বিক্ষোভের মিল খুব কমই আছে, বরং অমিলের পাল্লাটাই ভারি। সেবারের আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল সুনির্দিষ্ট, তারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পুনঃভোট গণনার দাবি করছিল। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন মাহমুদ আহমেদিনেজাদের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীরা। ২০০৯ সালের সেই গণবিক্ষোভের তুলনায় এবারের বিক্ষোভ আকারে অনেক ছোট হলেও এবারের দাবিগুলো অনেক বেশি গুরুত্ববহ। ইরানি বিপ্লবের পর এই প্রথম সে দেশে সরাসরি সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে এমন একটি আন্দোলন থেকে, যে আন্দোলনের কোনো একক কিংবা সংগঠিত নেতৃত্ব নেই। আরও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, অনেক ইরানি স্লোগান দিচ্ছে- ফিলিস্তিন ভুলে যাও, না গাজা, না লেবানন, আমার জীবন ইরানের জন্য
বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্য ইত্যাদি আর্থসামাজিক দাবির কথা ইরান সরকারও স্বীকার করে নিয়েছে এবং সমস্যা সমাধানে কাজ করছে বলে জানাচ্ছে। কিন্তু দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে যে আওয়াজ উঠেছে, সেটি আসলে কোনো পক্ষের জন্যই স্বস্তিদায়ক নয়। কারণ ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে সে দেশে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাই জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন। বর্তমান বিক্ষোভের জন্য অনেকেই রুহানির অর্থনৈতিক নীতির ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন। সে দাবির যৌক্তিকতাও আছে। কিন্তু তাই বলে সেটা সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার ঘাড়ে তো পড়ার কথা ছিল না!
অনেক বিশ্লেষক এবারের বিক্ষোভকে ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের প্রতিবিপ্লব হিসেবে দেখতে চাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত এ বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা সেরকম না হলেও তাদের স্লোগানগুলো কিন্তু ওইসব বিশ্লেষকের মতামতের পক্ষেই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
একটি দেশের জনগণ যে কোনো সময় তাদের দেশের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন চাইতে পারে, এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিদ্যমান, তাতে ওই অঞ্চলে আমেরিকা-ইসরাইলের অন্যতম শত্রু ইরানে বিক্ষোভের বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলে মনে হয় না। আর এটি ঘটছে এমন এক সময়, যখন তুরস্ক চাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকাবিরোধী বলয় গড়তে, যার অন্যতম অংশীদার হওয়ার কথা ইরানের। লক্ষণীয়, মাত্র কিছুদিন আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বিবৃতি দিয়েছেন, তুরস্ক কোনো সুন্নি বা শিয়া দেশ নয়, তুরস্ক একটি মুসলিম দেশ। স্পষ্টতই এ বিবৃতির উদ্দেশ্য ইরানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন। এ পরিস্থিতিতে ইরানের বর্তমান বিক্ষোভ বিশেষ ইঙ্গিত বহন করে।
এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, মধ্যপ্রাচ্যে গত কয়েক বছর ধরে যে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা চলছিল, সেটা এখন পুরোপুরি না হলেও অনেকটাই স্তিমিত। লিবিয়া, সিরিয়া, লেবানন, ইরাক, ইয়েমেন- কোথাও এখন আর যুদ্ধের সেই তেজ নেই। মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখার স্বার্থে এখন দরকার নয়া যুদ্ধক্ষেত্র। ইরান সেই নয়া যুদ্ধক্ষেত্র নয় তো?

(৫-১-২০১৮ তারিখের দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *