কুরবানির ধর্মীয় মাহাত্ম্য নিয়ে কথা বলছি না আমি। শুধুই আমাদের সামাজিক বাস্তবতাটুকু বোঝার চেষ্টা করছি। ধরা যাক, কুরবানি বন্ধ করে দিলেন। কারণ এটা পশুহত্যার মতো “জঘন্য”, “নৃসংশ” একটা উৎসব। তো হবেটা কী?? যারা কুরবানি দেয়, তাদের মাংস খাওয়ার পরিমাণ অতি অল্পই কমবে। হয়তো গরু-খাসি একটু কমে মুরগি সেই স্থানটা দখল করবে। কুরবানিবিহীন উৎসব হলে চিকেন, মাটন, বিফ ইত্যাদি কিনতে হবে উৎসবের খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করার জন্য। সাথে মাছও থাকতে পারে। এখন তো যারা কুরবানি দেয়, তাদের ঘরে এই কয়দিন মাছ-মুরগি সাধারণত খোঁজে পাওয়া যায় না, তখন উৎসবের পূর্ণতার জন্য এসবও লাগবে আরকি। মোদ্দাকথা, উৎসব পালনার্থে বহু ধরনের জীব হত্যা ঠিকই করা হবে, যেমনটা সারা দুনিয়ার প্রায় সব উৎসবের খাবার-দাবারের জন্য করতে হয়। কুরবানি যারা দেয়, তাদের যেহেতু আর্থিক সক্ষমতা আছে, তাই পশু কুরবানি হোক বা না হোক, উৎসবের জন্য তাদের ভালোমন্দ খাওয়া তো লাগবেই। তাহলে কি কুরবানি না হলে পশু জবাই একটুও কমবে না? আমার মনে হয় খুব একটা কমবে না। তবে গরু-খাসি বা এরকম কুরবানির উপযুক্ত পশু জবাই খানিকটা কমবে বটে। তার জায়গা দখল করবে মাছ-মুরগি। তবে একটা ক্ষেত্রে প্রচুর আয় হবে। সেটা হলো তখন আর গরিবদেরকে ভাগ দেওয়ার “ঝামেলাটা” থাকবে না। উৎসবের ভোগের জন্য মাছ-মাংস যা কিছু কেনা হবে, সেটা কেবল সামর্থ্যবানদের রান্নাঘরেই ঢুকবে। সারা বছরে কেবল কুরবানির মৌসুমে যাদের রান্নাঘরে গরু-খাসির মাংস প্রবেশ করে, তাদের ঘরে তখন আর কোন ধরনের মাংস ঢুকবে না। যে পরিমাণ মাংস এই গরিব মানুষের রান্নাঘরে পৌছাতো, সেই পরিমাণ মাংসের গরু-খাসির প্রাণ বাঁচবে হয়তো। বড়লোকের পয়সা একটু কমই খরচ হবে। ভালোই সাশ্রয় হবে। মোটামুটি কুরবানি বন্ধ করলে এই দৃশ্যই আমরা দেখবো, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। ফলে, যারা কুরবানির বিরুদ্ধে পশু অধিকার নিয়ে চিল্লাচ্ছেন, তারা আসলে পশু অধিকারের জন্য নয়, বরং চিল্লাচ্ছেন বড়লোকের পকেটের টাকা বাঁচানোর জন্য। তাদের দাবির বাস্তব সারসংক্ষেপ হলো- “যাদের সামর্থ্য আছে, তারা তো বাজার থেকে মাংস কিনে খেতে পারবেই। বেহুদা এই কুরবানি করে গরিবের বাচ্চাদের মাংস খাওয়ানোর কি দরকার?” তারা আবার অন্য মৌসুমে সাম্যের কথা বলে গলা ফাটিয়ে থাকেন। ঈদুল আদহা মুবারক।
My Personal Blog