কয়েকদিন থেকে ফেইসবুক এবং কয়েকটি ভুঁইফোড় অনলাইন নিউজ পোর্টালে মিয়ানমারের গণহত্যা প্রসঙ্গে অনেক জ্বালাময়ী পোস্ট করা হচ্ছে। কেউ কেউ প্রতিবাদস্বরূপ বাংলাদেশী বৌদ্ধদের ধরে ধরে জবাই করার আহ্বান জানাচ্ছেন! অনেকে আবার জাহাজের ছবি পোস্ট করে দাবী করছেন তুরস্ক/ইন্দোনেশিয়া নাকি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে নৌপথে যুদ্ধযাত্রা শুরু করে দিয়েছে! আমার পরিচিত এক ভাইয়া তো আবেগে তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে খলীফা আখ্যায়িত করে পোস্ট দিয়েছেন!
বাস্তবে সেখানে কি হচ্ছে??
বাস্তবে সেখানে কি হচ্ছে??
প্রথমত, তুরস্ক কিংবা ইন্দোনেশিয়ার যুদ্ধঘোষণার বিষয়টি নিছক কল্পকথা বৈ কিছু নয়। বিশ্বাসযোগ্য কোন তথ্যসূত্র ছাড়াই এ সব বলা হচ্ছে…
দ্বিতীয়ত, মিয়ানমারে বর্তমানে কোন অস্বাভাবিক কিছু হচ্ছে না, গণহত্যা তো নয় ই। দীর্ঘদিন থেকে সেখানে রোহিঙ্গারা নির্যাতিত হচ্ছে, তাদের জন্মগত অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে না। বর্তমানেও সেখানে এই সমস্যাটি বিদ্যমান। মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে সমস্যাটি নতুন আকার ধারণ করেছে। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দাবী করা হচ্ছে, এরা বাংলাদেশী। প্রতিবেশী দেশ হিসাবে আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এই সমস্যার সমাধানের জন্য আরো বেশী কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো একান্ত প্রয়োজন।
তৃতীয়ত, গণহত্যার প্রমাণস্বরূপ যে ছবিগুলো আপলোড করা হচ্ছে, সে গুলো আদৌ মিয়ানমারের কোন ছবি নয়। কিছু ছবি ইয়েমেনের, কিছু শ্রীলংকার, আর সব চেয়ে বেশী ফটোশপের।
চতুর্থত, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানরা যে নির্যাতিত হচ্ছেন, সে জন্যে সমবেদনা জানানো, কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর জন্যে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি আমাদের দায়িত্ব, ঠিক আছে। কিন্তু বাংলাদেশের বৌদ্ধদের উপর হামলা চালানোর আহ্বান জানানো কোন ক্রমেই মেনে নেয়া যায় না। তা হলে আমাদের আর মিয়ানমারের বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের মধ্যে পার্থক্য থাকলো কোথায়?? আমাদের পবিত্র ইসলাম ধর্ম কি এ ধরণের হামলাকে সমর্থন করে?
এখন প্রশ্ন হলো, এ সব ভূয়া ছবি/খবর কারা ছড়াচ্ছে? এ সব ভূয়া ছবি ও খবর প্রথমত কিছু জনপ্রিয় পেইজ থেকে ছড়ানো হয়েছিল, যারা বিভিন্ন আজগুবি খবর প্রচার করার জন্য প্রসিদ্ধ। এদের কারো উদ্দেশ্য নিছক লাইক, আর কেউ কেউ বৌদ্ধ-মুসলমান দাঙ্গা বাঁধিয়ে ফায়দা হাসিল করতে চায়। ইতোঃপূর্বে এরা দক্ষতার সাথে এই কাজ করতে পেরেছে। এদের পরিচয় সম্পর্কে বেশী কিছু বলতে চাচ্ছি না।
অতঃপর সরল বিশ্বাসে সত্যতা যাচাই না করেই ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ একের পর এক পোস্ট লিখে যাচ্ছেন, পূর্বোক্ত ধান্দাবাজদের দেয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে।
সবশেষে আবারো বলছি, মিয়ানমারে দীর্ঘদিন থেকে রোহিঙ্গারা নির্যাতিত হয়ে আসছে, এখনো হচ্ছে। কিন্তু এই মুহুর্তে কোন গণহত্যা চলছে, এই তথ্যটি সঠিক নয়। (যদি হয়ে থাকে, তা হলে নির্ভর্অ্যোগ্য তথ্যসূত্র জানালে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।) আর তুরস্ক কিংবা ইন্দোনেসিয়ার যুদ্ধ ঘোষণার বিষয়টি ভিত্তিহীন…
প্লিজ, কোন খবর বিশ্বাস করার আগে খবরের উৎসটি বিশ্বাসযোগ্য কি না, যাচাই করুন।
(লেখাটি আমার ব্যক্তিগত অনুসন্ধানের আলোকে লিখেছি। আমার দেয়া কোন তথ্য ভুল হলে তথ্যসূত্রসহ ভুল ধরিয়ে দিন।)