জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। এ বছর দেশের সর্ববৃহৎ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের ভর্তি পদ্ধতিতে বড় ধরণের পরিবর্তন এনেছে। অন্যান্য বছরের মত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি না করে এবার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের জিপিএর ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে বলে জানা গেছে। এদিকে গত বিশ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিচালনা কমিটির সভায় পয়লা অক্টোবর থেকে ভর্তি কার্যক্রম ও পয়লা ডিসেম্বর থেকে ২০১৫-১৬ সেশনের স্নাতক প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সভা পরবর্তী সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য শিক্ষার্থীদের যথাসময়ে জানানোর কথা বলা হয়েছে।
বিস্তারিত তথ্য এখনো জানা না গেলেও শিক্ষার্থী ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট মহলের মধ্যে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তি কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালিত হবে, না অফলাইনে পরিচালিত হবে, এ সম্পর্কে এখনো কিছু জানানো হয় নি। তবে অনলাইনে যদি হয়ে থাকে, তবে এবারের উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির ক্ষেত্রে যা হয়েছিল, তা আবার হবে কি না এ বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
তবে সবচেয়ে বেশী কথাবার্তা হচ্ছে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ার তারিখটি নিয়ে। সাধারনত স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে, এরপর অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের ভর্তি কার্যক্রম প্রায় সমাপ্ত হওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। সবার শেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু হওয়ার পিছনে অবশ্য যৌক্তিক কারন আছে। এ কথা সবাই জানে, যারা কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় না, আবার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায় না কিংবা হতে পারে না, কেবল তারাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তাই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এবার সবার আগে এ বিশ্বদ্যিালয়টি ভর্তি ও ক্লাস শুরু করতে যাচ্ছে। এর ফলে অতি আত্মবিশ্বাসীরা ব্যতীত প্রায় সবাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করবে। পরীক্ষার বালাই না থাকায় বিনা পরিশ্রমে (কিংবা বলা যেতে পারে গত ১২ বছরের পরিশ্রমের বিনিময়ে, নতুন পরিশ্রম ছাড়া) সবাই জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তি হয়ে যাবে। এরপর শুরু হবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ঐতিহ্যবাহী ভর্তিযুদ্ধ। এ যুদ্ধে বিজয়ীরা দেশের বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গুডবাই জানিয়ে পছন্দের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাবে, এই সহজ সত্যটি বোঝার জন্য শিক্ষাবিদ হতে হয় না, কমন সেন্সই যথেষ্ট।
ফলে জানুয়ারী মাসে দেখা যাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভূক্ত কলেজসমূহে অনেক শিক্ষার্থীর পছন্দের ডিপার্টমেন্টে শিক্ষার্থী সংকট, অথচ অক্টোবরে এসব ডিপার্টমেন্টে অনেকেই ভর্তি হতে পারবে না, পরবর্তীতে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মেধাবীদের দাপটে। উদাহরণ স্বরূপ, বর্তমানে ইংরেজী, অর্থনীতি, বিবিএ এসব বিষয়ের চাহিদা অনেক বেশী। জিপিএর ভিত্তিতে অক্টোবরে এসব বিষয়ে যারা ভর্তি হবে, পরবর্তীতে তাদের অনেকেই চলে যাবে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফলে যে শিক্ষার্থী অর্থনীতিতে পড়ার সুযোগ না পেয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হয়েছে, জানুয়ারীতে সে দেখবে অর্থনীতিতে অনেক আসন ফাঁকা। ঐ পরিস্থিতিতে হয়তো মাইগ্রেশনের ব্যবস্থা রাখা হবে। কিন্তু বিভিন্ন কারনে মাইগ্রেশনের ক্ষেত্রে সবাইকে সমান সুযোগ দেয়া সম্ভব হবে না, তা যত সদিচ্ছাই থাকুক না কেন।
তা ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ভর্তি বাতিল করে নি। ফলে বাস্তবে অর্থনীতি বিভাগে প্রচুর আসন ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও কাগজে কলমে সেখানে কোন আসনই খালি থাকবে না। এক কথায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভূক্ত কলেজসমূহে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি বিরাজ করবে। এ পরিস্থিতির দায় কে নেবে? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য মহোদয়, নাকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটি, না আর কেউ?
এ কথা সত্য, যে কোন ব্যাপারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সুবিধামাফিক সিদ্ধান্ত নেয়ার আইনী অধিকার রাখে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে বাধ্য নয়। কিন্তু আইনীভাবে না হলেও নৈতিকভাবে শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি দৃষ্টি রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য, এ কথা তো অনস্বীকার্য।
কাজেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিৎ হবে বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, যাতে শিক্ষার্থীরা কোন ধরনের সমস্যায় না পড়ে, ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। আশা করি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের দেশের বাস্তবতার কথা মাথায় রেখে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে। অন্যথায় তাদের এরকম অযৌক্তিক তাড়াহুড়ার কারনে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্থ হবে।