শিক্ষকদের কর্মবিরতি: মর্যাদার লড়াই

teacher movement 13802
শিক্ষক আন্দোলনের প্রতীকী ছবি..
গত ১১ তারিখ থেকে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ কর্মবিরতি পালন করছেন। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাঙ্গন। মুখ্যত এই আন্দোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা, সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষকদের দায়ী বলতে পারছি না, কারণ তাঁরা হঠাত্ কর্মবিরতিতে যাননি। মানুষের ধারণা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাঁদের বেতন বৃদ্ধির জন্যে আন্দোলন করছেন। অথচ বাস্তবতা হলো, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বর্তমান দাবি পূরণ হলে তাঁদের বেতন এক টাকাও বাড়বে না। কারণ এজন্যে তাঁদের আন্দোলন নয়। তাঁদের আন্দোলন মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন। সপ্তম বেতনস্কেলে যেখানে তাঁদের মধ্যে সিনিয়ররা অর্থাত্ অধ্যাপকরা সর্বোচ্চ ধাপে বেতন পেতেন, সেখানে এখন তাঁরা পাবেন পঞ্চম ধাপে! বাহ্যত, অষ্টম বেতনস্কেল অনুসারে অধ্যাপকরা তৃতীয় গ্রেডে বেতন পাবেন। কিন্তু বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। প্রথম ধাপে পাবেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব, দ্বিতীয় ধাপে সিনিয়র সচিব, তৃতীয় ধাপে প্রথম গ্রেডে পাবেন সচিবরা, চতুর্থ ধাপে দ্বিতীয় গ্রেডে অতিরিক্ত সচিবরা, পঞ্চম ধাপে তৃতীয় গ্রেডে যুগ্ম সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা বেতন পাবেন। অর্থাত্ প্রথম গ্রেডের ওপর আরো দুটি ধাপ সৃষ্টি করা হয়েছে আমলাদের জন্যে। যার ফলে তৃতীয় গ্রেড হলেও অধ্যাপকরা বেতন পাবেন পঞ্চম ধাপে।
শিক্ষকদের সমালোচনা করা হচ্ছে তাঁরা সচিবদের সমমর্যাদা চাচ্ছেন বলে। কিন্তু শিক্ষকরা কি সচিবদের সমমর্যাদার উপযুক্ত? তাঁদের তো সচিবদের চেয়ে বেশি মর্যাদা পাওয়ার কথা। এ কথা তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও স্বীকার করছেন।

অনেকে শিক্ষকরা পার্ট টাইম জব করেন, আমলাদের মতো পরিশ্রম করেন না, তাঁদের অবসরের বয়স আমলাদের চেয়ে বেশিএইসব অজুহাতে শিক্ষকদের অপেক্ষাকৃত নিম্ন স্কেলে বেতন দেওয়ার পক্ষে। পরিশ্রমের পরিমাণ দিয়ে বেতন কাঠামো তৈরি করলে মেনে নেওয়া যায়, তবে সেক্ষেত্রে নৈশ প্রহরীদের প্রথম গ্রেডে বেতন দেওয়ার আবেদন করা যেতেই পারে। পার্ট টাইম জব শতকরা কতজন শিক্ষক করেন, বা করার সুযোগ পান, এঁদের জন্যে সবাইকে বঞ্চিত করা উচিত কি না, তা বোঝার ক্ষমতা নেই, এমন মানুষ যদি বেতন কাঠামো তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে কিছু বলার নেই। সর্বোপরি, অবসরের পর একজন সচিবের সম্পত্তির হিসাব, আর একজন নামকরা অধ্যাপকের সম্পত্তির হিসাবের তুলনা করলে বোঝা যাবে, আসলে বেতনের বাইরে কে কত অর্থ উপার্জন করার সুযোগ পান। কাজেই এসব কথার কোনো গুরুত্ব থাকতে পারে বলে মনে হয় না।

(লেখাটি ২০ জানুয়ারি, ২০১৬ তারিখের দৈনিক ইত্তেফাকদৈনিক সাম্প্রতিক দেশকাল পত্রিকায় প্রকাশিত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *