‘A’ কেন ‘অ’র প্রতিবর্ণ? আবার যবরের প্রতিবর্ণ কেন ‘অ’ (শূণ্য) কার?

images
ছবি:আরবি-ইংরেজি প্রতিবর্ণায়ন

[বি.দ্র.: ইহা একটি অনুমান নির্ভর পোস্ট, বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে সুনিশ্চিত তথ্য জানা-ই এটির মূল উদ্দেশ্য। যারা এটি পড়বেন, একথাটি মনে রাখলে ভালো হবে।]

প্রেক্ষাপট: প্রতিবর্ণায়ন সম্পর্কে কিছুটা বিশদ আকারে একটা কিছু লেখার ইচ্ছা ছিল অনেক দিন থেকে, যেখানে মূল বিষয় থাকার কথা ছিল “আরবী-বাংলা প্রতিবর্ণায়ন”। প্রাসঙ্গিক হিসেবে মাদ্দ ও দীর্ঘস্বরের আলোচনাও থাকত, কিছুটা ফার্সি-ইংরেজি-সংস্কৃতের কথাও থাকত। এ বিষয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছি অনেক দিন থেকে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বিশদ লেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি, তাই সেদিকে যাচ্ছি না, এখানে শুধু শিরোনামের প্রশ্ন দুটিই আলোচনা করছি।


আমরা প্রায়ই দেখি, বাংলা অ ধ্বনির প্রতিবর্ণায়ন হয় ইংরেজি ‘A’ দিয়ে, যেমন: পদ্মা=Padma, অথচ ‘A’ মূলত ‘আ’, ‘এ’ অথবা ‘অ্যা’ ধ্বনির অনরূপ, খুব কম ক্ষেত্রেই ‘অ’ ধ্বনির অনুরূপ হয়। আবার আইপিএর কথা যদি বলি, তো সেখানেও A=আ। তাহলে ‘A’ দিয়ে কেন ‘অ’ বুঝাচ্ছি?

আসলে সংস্কৃতে ‘অ’ এর উচ্চারণ হলো ‘হ্রস্ব আ’র মতো, আর ‘আ’ এর উচ্চারণ ‘দীর্ঘ আ’-র মতো। সে জন্যে সংস্কৃত-ইংরেজি প্রতি বর্ণায়নে ‘অ’ এর বদলে ‘a’ এবং ‘আ’ এর বদলে ‘aa’ লেখার রেওয়াজ আছে। হিন্দির ক্ষেত্রেও একই কথা। সেই রেওয়াজ অনুসারে অনেকে বাংলায়ও ‘অ’ এর স্থলে ‘A’ লিখেন। প্রচলনটা বাংলাদেশের তুলনায় ভারতেই বেশি।


উচ্চারণের দিক থেকে আরবী ‘যবর’ হলো বাংলা ‘আ’ কারের অনুরূপ। কিন্তু, অনেক ক্ষেত্রে আমরা সেটার প্রতিবর্ণায়ন করি অ কার দিয়ে। যেমন: আমরা লিখি ‘নবী’, অথচ ‘নূন’ বর্ণে যবর আছে, তাই ‘ন’তে ‘আ’ কার দেওয়ার কথা, (“ব”তে কী হবে, সে বিতর্কে নাইবা গেলাম) কিন্তু তাতো দেওয়া হয় নি। কেন?

একথা সর্বজন স্বীকৃত বাংলায় ইসলামের আগমণে ইরানিদের অবদান অনেক। সে জন্যে অনেক ইসলামী পরিভাষাই বাংলায় পৌছেছে ফার্সি হয়ে, সরাসরি আরবী থেকে বাংলায় আসে নি। ফার্সিতে শুধু ‘যবর’ মানে ‘অ’ (শূণ্য) কার, আর যবরের সাথে আলিফ মানে আ কার, যেখানে আরবীতে শুধু যবর মানে হ্রস্ব আ কার, আর যবরের সাথে আলিফ মানে দীর্ঘ আ কার। ‘নমাজ’ (نماز) শব্দের ‘ন’ (নূন) তে শুধু যবর, ‘ম’ (মীম) এ যবর আছে, তার পর মাদ্দের আলিফও আছে। এ জন্যে এটার প্রতিবর্ণায়ন নমাজই শুদ্ধ, (আপাতত জ/য বিতর্ক না করলে) যদিও আজকাল অনেকেই নামাজ লিখেন। সম্ভবত এ কারণেই ফার্সীর প্রভাবে নবী বা এ ধরণের শব্দে যবর থাকা সত্ত্বেও আ কার দিয়ে প্রতিবর্ণায়ন করা হয় না। প্রসঙ্গত, একই কারণে যের এর প্রতিবর্ণায়নও অনেক সময় ই কার দিয়ে না করে এ কার দিয়ে করা হয়েছে। এমনকি মাওলানা আকরম খাঁ তো সারা জীবনই ‘এসলাম’ লিখে গেছেন, লিখিয়ে গেছেন তাঁর আজাদ পত্রিকায়। ‘হেযবুত তওহীদ’ওয়ালাদের এখনো ‘এসলাম’, ‘এমাম’ প্রভৃতি লিখতে দেখা যায় অনলাইনে, এবং অফলাইনে তাদের নিজস্ব প্রকাশনায়, পত্র-পত্রিকায়।

কিন্তু সরাসরি আরবী থেকে প্রতিবর্ণায়নের ক্ষেত্রেও তো এরকম [যবর=অ (শূণ্য) কার] হয়েছে, সেটা কেন হলো? বাংলা একাডেমি থেকে এক সময় অনেক ইসলামী বই-কিতাবের অনুবাদ বেরিয়েছিল। তেমনই একটি দুষ্প্রাপ্য অনুবাদ গ্রন্থ হলো ‘তজরীদ আল বুখারী’ (আসলে ‘তাজরীদুল বুখারী’), পুরো বইয়ে দেখলাম যবরকে প্রতিবর্ণায়িত করা হয়েছে ‘অ’ (শূণ্য) কার দ্বারা। আস-সাবউল মুআল্লাকাতের পুরনো একটা বাংলা অনুবাদেও দেখি একই অবস্থা, এমনকি নামটাও এরকম: ‘আস সবউল মুঅল্লকাত’!

এরকম আরো অনেক পুরনো বইই দেখা যায়, যেগুলোতে সরাসরি আরবী থেকে প্রতিবর্ণায়নের ক্ষেত্রেও এ ধরণের প্রতিবর্ণায়ন করা হয়েছে। আমার মতে এর দুটি ব্যাখ্যা হতে পারে। হয়তো অনুবাদকরা ফার্সি উচ্চারণের আলোকে প্রতিবর্ণায়ন করেছেন, নিজেরা ফার্সিতে সুদক্ষ হওয়ার কারণে, অথবা তাঁরা সংস্কৃতের অনুসরণে ‘অ’কে ‘হ্রস্ব আ’ এবং ‘আ’কে ‘দীর্ঘ আ’ ধরে নিয়েছেন, আরবী থেকে প্রতিবর্ণায়নের সুবিধার্থে। কেননা সংস্কৃতে হ্রস্ব আ ও দীর্ঘ আ আছে, সেটা বাংলার ক্ষেত্রেও ধরে নিলে আরবী মাদ্দসহ যবর ও মাদ্দ ছাড়া যবরকে পৃথক করাটা সহজ হয়ে যায়। এরকম কোন একটি কারণে হয়তো একদা এ ধরণের প্রতিবর্ণায়ন চালু হয়েছিল, পরবর্তীতে অনেক দিন ধরেই সেটা চলতে থাকে। (এর বাইরে আরবী উচ্চারণকেন্দ্রিক কোন কারণ আছে কিনা, সেটা কোন বিদগ্ধ জনের জানা থাকলে আমাদেরকে জানালে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।)


শিরোনামে উল্লেখিত প্রশ্নের উত্তরে উপরে যা কিছু লিখলাম সবই আমার অনুমান নির্ভর (!), এ বিষয়ে আরো নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে আমি খুবই আগ্রহী। এসকল বিষয়ে, তথা প্রতিবর্ণায়ন, উচ্চারণ প্রভৃতি বিষয়ে অ্যাকাডেমিক আলোচনা খুবই দরকার, আশা করি সেটা উপযুক্ত ব্যক্তিবর্গের হাতেই হবে। আমার দৌড় তো ফেইসবুক অব্দিই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *