আযাদী আন্দোলন ১৮৫৭
আল্লামা ফযলে হক খায়রাবাদী
অনুবাদক: মাওলানা মুহিউদ্দীন খান
প্রকাশক: মদীনা পাবলিকেশান্স
আল্লামা ফযলে হক খায়রাবাদী
অনুবাদক: মাওলানা মুহিউদ্দীন খান
প্রকাশক: মদীনা পাবলিকেশান্স
ক্লাস ফোর/ফাইভে যখন ছিলাম, তখন থেকেই আব্বুর বইয়ের সংগ্রহশালায় আমার অবাধ বিচরণ। সে হিসেবে ঠিক কখন বইটি প্রথম পড়ছি, নিশ্চিত করে বলতে পারছি না, তবে সেটা অষ্টম থেকে দশম পর্যন্ত কোন এক ক্লাসে হবে খুব সম্ভব। তবে এতটুকু মনে আছে যে এই বই সে সময়ে আমার কিশোর মনকে সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করেছিল, যদিও ততদিনে নসীম হেজাযী, আলতামাশ প্রমুখ লেখকদের সাথে ভালো রকমের পরিচয় হয়ে গেছে। গল্পের চেয়ে বাস্তব ঘটনা যে আরও বেশি রোমাঞ্চকর, আরও বেশি মর্মস্পর্শী হতে পারে, তা আল্লামা ফযলে হকের এই বইটি না পড়লে এতো সহজে বিশ্বাস হতো না।
কারো যদি ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ থেকে থাকে, তবে ১৮৫৭ সালের মহাবিপ্লব (তথাকথিত সিপাহী বিদ্রোহ) সম্পর্কে এর চেয়ে নির্ভরযোগ্য আর কোন বই হতে পারে না, কেউ যদি আত্মজীবনী পড়তে চান, তবে হলফ করে বলতে পারি এতো চমৎকার আত্মজীবনী খুব সহজে আর পাবেন না, কেউ যদি রোমাঞ্চকর ঐতিহাসিক উপন্যাস পড়তে চান, তবে এটি উপন্যাস না হওয়া সত্ত্বেও আপনি এর মধ্যে সেই স্বাদ পেয়ে যাবেন।
খায়রাবাদি ছিলেন ১৮৫৭ সালের বিপ্লবের অন্যতম সংগঠক, সেই অপরাধে নির্বাসিত হয়েছিলেন আন্দামান দ্বীপে, সহ্য করতে হয়েছিলো অমানবিক শাস্তি। (তাঁকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার এরাদা রাখি, অন্য কোন সময়ে, অন্য কোন লেখায়)
নির্বাসিত খায়রাবাদী আরবিতে লিখেন ‘الثورةالهندية‘ বা ‘ভারতীয় বিপ্লব‘। কাগজ সেখানে সুলভ ছিল না, তাই কাফনের জন্য যে কাপড় নিয়ে গিয়েছিলেন সেটিতেই লিখেন এই বইটি, কলমের কালি নয়, কয়লার কালি দিয়ে। (মাঝেমধ্যে অবশ্য কাগজ-কলম পেতেন প্রাচীন আরবি-ফার্সি গ্রন্থ ব্যাখ্যা করার জন্য, জেলারের নিকট থেকে, তবে সেটা খুবই পরিমিত থাকত।) এই উপমহাদেশবাসীর সৌভাগ্য যে সেই কাফনের কাপড় তিনি তাঁর ছেলের নিকট পাঠাতে পেরেছিলেন। এরপর সেটি উর্দু অনুবাদসহ প্রকাশিত হয়।
উর্দু অনুবাদসহ আরবি এই বইটি খুবই দূর্লভ, তবে বাংলাভাষীদের সৌভাগ্য, দূর্লভ এই বইয়ের একটি কপি মাওলানা মুহিউদ্দিন খানের -রাহিমাহুল্লাহ- মতো বিদগ্ধজনের হাতে পৌছেছিল। তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন, অনুবাদ করে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। মাওলানা খান রাহিমাহুল্লাহুর হাতের ছোয়ায় অনুবাদটিও বেশ সুখপাঠ্য হয়েছে, যদিও সেটা সাধু ভাষায়ই করা হয়েছে।
বইটিতে ১৮৫৭ সালের মহাবিপ্লবের সূচনা, বিপ্লবে সে সময়ের আলিম সমাজ, সিপাহী এবং সম্রাট বাহাদুর শাহসহ মোগলদের ভূমিকা আলোচিত হয়েছে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই লেখকই দিল্লির শাহি মসজিদ থেকে জিহাদের ফতোয়া জারি করে ঐ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। বিপ্লবের ব্যর্থতার কারণ ও বিপ্লবীদের পরিণামের কথাও বেশ দরদের সাথে উল্লেখ করেছেন লেখক, কেননা এই বিপ্লব ব্যর্থ হলে যাদেরকে অমানবিক শাস্তি ভোগ করতে হয়েছিল, লেখক ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।
আগেই বলেছি বইটি অনেক আগের পড়া। সম্প্রতি বই রিলেটেড এক গ্রুপে ১৮৫৭‘র বিপ্লব বিষয়ক বই সম্পর্কে জনৈক পাঠক জানতে চাইলে এই বইটি সাজেস্ট করেছিলাম। এরপর মনে হলো, পাঠশালার জন্য একটা রিভিউ লিখলে মন্দ হয় না। সে নিয়তে বইটি আবার পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, কিন্তু দেখলাম ঐ অনেক আগের পড়া থেকেই দিব্যি রিভিউ লিখে ফেলতে পারছি, কেননা আমাকে এতোটাই স্পর্শ করেছে বইটি। তাই নতুন করে আর পড়া হয় নি। কাজেই ইদানীং কেউ পড়লে, কিংবা এই রিভিউ পড়ে কেউ বইটি পড়লে সম্পূরক রিভিউ দিলে ভালো হবে।