ডাকসু নির্বাচন হোক উৎসবের

image 153555 1552253654
আজ ডাকসু নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে কদিন ধরে চলেছে প্রচারণা। ছাত্রলীগের প্রচারণা বেশি দেখা গেলেও থেমে ছিল না অন্যদের প্রচারণাও। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে প্রবেশের সুযোগ না পেলেও নির্বাচন উপলক্ষে ছাত্রদলের নেতারা, যাদের অনেকেই বহু আগে ছাত্রত্ব হারিয়েছেন, ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালানোর সুযোগ পেয়েছেন।
এমনকি প্রথমবারের মতো একটি ইসলামী সংগঠনও মধুর ক্যান্টিনে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছে। নির্বাচন ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিদ্যমান। নানা কারণে দেশের রাজনীতিতে নির্বাচনের জৌলুস আগের মতো নেই।
সর্বশেষ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন কিংবা উপজেলা নির্বাচনের মাঠের খোঁজ নিলেই দেখা যাবে কতটা নিরুত্তাপ সেসব নির্বাচনী মাঠ। এ পরিস্থিতিতেও দেশের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ও হল ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জৌলুসের কোনো কমতি নেই।
ডাকসু নির্বাচন ঠিক কতটা অংশগ্রহণমূলক আর জৌলুসপূর্ণ হবে, তার ধারণা পাওয়া যায় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা থেকে। এবার শুধু কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি পদে লড়ছেন ২১ জন ছাত্রনেতা। ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের পাশাপাশি এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বাম ঘরানার একাধিক প্যানেল।
কোটা আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি আরও দুটি নির্দলীয় প্যানেলও অংশ নিচ্ছে। গত জাতীয় নির্বাচনে বহুল আলোচিত ইসলামী আন্দোলনের ছাত্রসংগঠনও আলাদা প্যানেল দিয়েছে এবারের ডাকসু নির্বাচনে।
জাতীয় রাজনীতিতে সাধারণত সব নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ-বিএনপি দ্বৈরথের আলোচনা সামনে আসে, ডাকসু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেরকম কোনো আলোচনা নেই। ছাত্রদল একে তো দীর্ঘদিন থেকে ক্ষমতায় নেই, ক্যাম্পাসেও নেই প্রায় এক দশকেরও বেশি সময়, তার ওপর তাদের বেশিরভাগ নেতাই ক্যাম্পাসে একেবারে অপরিচিত। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব কমানো খুব সহজ কাজ নয়।
এ কারণে বেশিরভাগ হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দেয়াও সম্ভব হয়নি ছাত্রদলের পক্ষে। হল সংসদগুলোয় তিন-চারজনের প্যানেল দিতে বাধ্য হয়েছে তারা, তাও কয়েকটি হল বাদ পড়েছে। এদিক থেকে ছাত্রলীগ বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় আছে, তাদের প্যানেলের বেশিরভাগ প্রার্থীই ক্যাম্পাসে পরিচিত মুখ, খুব স্বাভাবিক কারণেই।
ছাত্রদল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় খুব ভালোভাবে না থাকলেও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ডাকসু নির্বাচন ঠিকই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের প্যানেলটি। এই প্যানেলের প্রার্থীরা কোটা আন্দোলনের কারণে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। প্রশ্ন ফাঁসের জন্য একাকী অনশন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা আইনের ছাত্র আখতারও এই প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।
এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনেকেরও ক্যাম্পাসে জনপ্রিয়তা রয়েছে তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণে। বিগত দিনগুলোতে ডাকসুর দাবিতে সবচেয়ে সোচ্চার ছিল বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। অতীতে ডাকসু নির্বাচনে তারা বেশ ভালো অবস্থানে থাকত।
তবে তিন দশকে ক্যাম্পাসের অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বামদের মধ্যে ভিপি পদে লিটন নন্দীসহ তার প্যানেলের কয়েকজন মোটামুটি আলোচনায় আছেন। প্রশাসনের উচিত সব আগ্রহী ভোটার যেন ভোট দিতে সক্ষম হয়, তা নিশ্চিত করা। আর যেসব প্রার্থী নির্বাচিত হবেন, তাদের উচিত নিজেদের নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।
তাহলেই কেবল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলমান আনন্দ-উদ্দীপনার একটি উৎসবমুখর সমাপ্তি সম্ভব। অন্যথায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে এ নির্বাচন আফসোসের কারণ হয়ে থাকবে। নির্বাচিত ডাকসু নেতারাও নিজেদের পুরোপুরি নির্বাচিত দাবি করার সুযোগ হারাবেন। তিন দশক পরের এই নির্বাচন যেন শেষ মুহূর্তে ব্যর্থতার মুখোমুখি না হয়, সেদিকে সবারই খেয়াল রাখা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *