নাসিরনগর এবং রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে কোন কথা বললেই অনেকে নাসিরনগর প্রসঙ্গ সামনে নিয়ে আসেন। তাদের ভাবখানা এমন, যে দেশে নাসিরনগরের হামলার মতো ঘটনা ঘটে, সে দেশের নাগরিকদের জন্যে দুনিয়ার কোন গণহত্যা সম্পর্কে কথা বলা অনুচিত।

DU Human Chain For Rohingya
রোহিঙ্গাদের দমন-পীড়নের প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
ব্যক্তিগতভাবে আমি উভয় ঘটনাতেই ব্যথিত, কাজেই উভয়ক্ষেত্রেই প্রতিবাদকারীদের প্রতি নৈতিক সমর্থন ব্যক্ত করি। কিন্তু একটি কথা আমাদের ভুললে চলবে না, উভয় ঘটনার প্রকৃতি আদৌ এক নয়। রোহিঙ্গাদের উপর যে অত্যাচার চলছে, সেটি নিঃসন্দেহে একটি গণহত্যা, এবং শতভাগ সাম্প্রদায়িক কারনেই এ হত্যাকান্ড সংগঠিত হচ্ছে। অপরদিকে নাসিরনগরের ঘটনা গণহত্যা তো নয়ই, আপাতদৃষ্টিতে সাম্প্রদায়িক হামলা মনে হলেও আদতে তাও নয়। পত্রিকান্তরে জেনেছি, নাসিরনগর হামলার ইন্ধনদাতাদের মধ্যে হিন্দু খ্রিষ্টান বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদেরউপজেলা সভাপতি আদেশচন্দ্রদেবও আছেন। আমি কোনভাবেই নাসিরনগরের ঘটনাকে ছোট করে দেখাতে চাচ্ছি না, শুধু একটি কথা স্পষ্ট করতে চাচ্ছি যে নাসিরনগরের ঘটনা যতোটা না সাম্প্রদায়িক, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক। কাজেই এ বিষয়ে কেউ বলতে পারেন না যে, হিন্দুদের উপর যখন সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছিল, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন?
আমার অবস্থান আরো সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, আমি রাজনৈতিক কিংবা সাম্প্রদায়িক, সব ধরনের সহিংসতার বিরোধী, তবে একটার সাথে আরেকটার তালগোল পাকিয়ে ফেলার পক্ষে নই। আমি আরো বলতে চাই, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নাসিরনগরের ঘটনায় আমি লজ্জিত, তবে রোহিঙ্গা সমস্যার সাথে নাসিরনগরের ঘটনা কোনভাবেই তুলনীয় বলে মনে করি না।
রোহিঙ্গারা, আমার মনে হয়, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে হতভাগ্য মানুষ। ফিলিস্তিনিদের কথা বলুন, আর সিরীয়দের কথা বলুন, তবু দুনিয়ার মানুষ জানে, কিন্তু এই হতভাগাদের কথা দুনিয়ার মানুষ ভালো করে জানেও না। তাদের প্রতিবেশী হিসেবে আমাদেরই কর্তব্য হলো তাদের সমস্যার দিকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
রোহিঙ্গা সমস্যার ভূক্তভোগী যেহেতু আমরাও, ওদের বারবার পুশব্যাক করে এই সমস্যা জিইয়ে না রেখে আমরা কেন কূটনৈতিক উদ্যোগ নিচ্ছি না এই সমস্যার সমাধানের জন্য? আমাদের দেশে তো এখনো সরকারি হিসাবে পাঁচ লাখ, এবং হিসাবের বাইরে আরো কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে। এই সমস্যার সমাধান না হলে এদের দায়ভার তো আমাদেরকেই বইতে হবে। কাজেই রোহিঙ্গা সমস্যার ব্যাপারে চোখ বুজে না থেকে, সমাধানের চেষ্টা করা দরকার, আমাদের নিজেদের স্বার্থেই।
সীমান্ত খুলে দেওয়া উচিৎ কি না, এ বিষয়ে যারা কথা বলছেন, তাদের সবিনয়ে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, একাত্তরে আমাদের প্রতিবেশী কিন্তু আমাদের জন্যে সীমান্ত খুলে দিয়েছিল, এবং সেই সাথে আমাদের সমস্যার সমাধানের জন্যে বিশ্ববাসীর উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। ফলে আমরা আবার আমাদের দেশে ফিরে আসতে পেরছিলাম। আমরা কি সেই নযির অনুসরন করতে পারি না?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *